গাইবান্ধা-৩ আসনে নির্বাচন বন্ধ করে দিল ইসি।

গাইবান্ধা-৩ আসনে নির্বাচন বন্ধ করে দিল ইসি।

গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ি-সাদুল্যাপুর) আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ড. টিআইএম ফজলে রাব্বী চৌধুরী (৮৪) মারা গেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।গাইবান্ধা

বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) ভোরে রাজধানীর বনানীতে নিজ বাসায় অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি ইন্তেকাল করেন। রাব্বী চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসে সংক্রমণ ও উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তার ছোট ভাই বাদশা চৌধুরী এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ফজলে রাব্বী চৌধুরী জাতীয় পার্টি থেকে গাইবান্ধা-৩ আসনে ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পারিবারিক জীবনে তিনি ৩ ছেলে ও ২ কন্যা সন্তানের বাবা।

রাব্বী চৌধুরী ১৯৩৪ সালে ১ অক্টোবর গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার তালুকজামিরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ৬ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তার বাবা মরহুম আহসান উদ্দিন চৌধুর ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক।

ড.ফজলে রাব্বী চৌধুরী ১৯৫৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অ্যানিম্যাল হ্যাজব্যনটিতে ২য় স্থান অধিকার করে বি.এস.সি (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন।

১৯৬০ সালে আমেরিকা সরকারের বৃত্তি নিয়ে ১৯৬৩ সালে টেকসাস এন্ড এস হতে এম.এস.সি এবং ১৯৬৫ সালে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহে এ্যাসিসট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে চাকরিতে যোগদান দেন।

তিনি ১৯৬৭ সালে এসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে এবং ১৯৬৯ সালে প্রফেসর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। এছাড়াও ডিন, ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি উলফসন কলেজের ফেলো নির্বাচিত হন।

ড. রাব্বী ১৯৮৪ সালে এইচ.এম এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপাতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। পরবর্তী সময় তিনি ভূমি মন্ত্রী, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী ও সংস্থাপন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ড. ফজলে রাব্বী ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। সভাপতি সরকারি প্রতিশ্রুতি কমিটি, কৃষি বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন।

পরবর্তীতে তিনি জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) যোগ দেন। পার্টি চেয়ারম্যান কাজী জাফর মারা গেলে তিনি দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

 এ আসনে নির্বাচন বন্ধঃ
এইবার আসন্ন জাতিয় নির্বাচনে গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্যাপুর) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জাতীয় পার্টির (জাফর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ড. টি আই এম ফজলে রাব্বী চৌধুরী মারা যাওয়ায় এ আসনের নির্বাচন বন্ধ থাকবে। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পুনঃতফসিল ঘোষণা করে এ নির্বাচনের তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সচিব এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আইনে বলা আছে যে কোনো প্রার্থী মারা গেলে ওই আসনে নির্বাচন স্থগিত করা হবে। স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রার্থীর মৃত্যুর সনদপত্রসহ আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন। জানালে পরে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনার সিদ্ধান্ত দেবেন। স্বাভাবিকভাবে আইনে যেটা আছে, সে অনুসারে ওই আসনের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন স্থগিত করা হবে। পরবর্তীতে পুনঃতফসিল ঘোষণা করে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১৭ (১) বলা আছে, কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মারা গেলে রিটার্নিং কর্মকর্তা গণবিজ্ঞপ্তি দেবে। ওই আসনে নির্বাচনের সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

আজ ভোরে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফজলে রাব্বী চৌধুরী।