সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের আসনে অবিশ্বাস্য ম্যাজিকের সম্ভাবনা।
সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের মৌলভীবাজার-২ আসনে এবারের নির্বাচনে অবিশ্বাস্য ম্যাজিক হওয়ার সম্ভাবনা।
সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এবারের নির্বাচনে অবিশ্বাস্য ম্যাজিক দেখাবেন মৌলভীবাজার-2 আসনে। কারণ এর আগে এই আসোনে কখনো জয়ী হতে পারেনি ধানের শীষ প্রতীক। এমনকি কখনো তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আসতে পারেনি বিএনপির কোনো প্রার্থী। বরং ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে এ আসনে দুইবার জামানত হারিয়েছে বিএনপি।

কিন্ত এবার সে আসনে ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে লড়বেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। যে আসনে কখনো জয়ী হতে পারেনি ধানের শীষ। সে আসনে ধানের শীষ নিয়ে শেষ হাসি হাসতে পারবেন কী সুলতান মনসুর? পারবেন কী অতীতের ইতিহাস ভেঙ্গে নতুন ইতিহাস গড়তে? তবে মৌলভীবাজারের ভোটাররা বলছেন, এবার ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে নতুন ইতিহাস গড়বেন আওয়ামী লীগের সাবেক এই এমপি।
মৌলভীবাজারের এই আসনে প্রতি নির্বাচনেই থাকে একটি চমক । এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি আর হবেও না বলে ধারণা করা যাচ্ছে। কারণ এখানে দলীয় প্রতীকের চেয়ে সব সময় এগিয়ে থাকে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা। এ অঞ্চলের মানুষ দলীয় প্রতীক দেখে তাদের মূল্যবান ভোট দেয় না। তারা ভোট তাকেই দেন যাকে তারা যোগ্য মনে করেন এবং সেই ব্যক্তি যে, দলেরই হোক না কেন। এ অঞ্চলের জনগণ যার দ্বারা উন্নয়ন সমৃদ্ধি ও মৌলভীবাজার এর রাজনীতি শান্ত এবং সুষ্ঠু হবে বলে মনে করেন তাকেই ভোট দেন।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকেই সুলতান মনসুর নৌকা প্রতীক নিয়ে এখানকার এমপি হয়েছিলেন। আর এ জয় ছিল নৌকার সর্বশেষ জয়। এরপর আর কখনো জয় পায়নি নৌকা। কখনো জিততেও পারেনি ধানের শীষ। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিতর্কিত একদলীয় নির্বাচনে ধানের শীষের জয় দেখানো হলেও নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী তা স্বীকৃতি পায়নি।
কখনো জয় না পাওয়া এ আসনে এবার সুলতান মনসুরের ওপর ভর করে এই নির্বাচনে ধানের শীষ চমক দেখাতে পারে। এমনটি বলছেন স্থানীয় ভোটাররা। কারণ সুলতান মনসুরের ব্যক্তিগত ইমেজের ওপর ভর করে এখানের মানুষ ধানের শীষে ভোট দেবে।
নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া তথ্যঃ
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৯ সালে প্রথম নির্বাচনে আসে বিএনপি। সে নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করে সৈয়দ আকমল হোসেন তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি। ১৯৯১ সালে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী আতাউর রহমান নির্বাচনে আসলেও মাত্র পাঁচ হাজার ভোট পেয়ে জামানত হারান।
১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিতর্কিত একদলীয় নির্বাচনে ধানের শীষের জয় দেখানো হলেও নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী তা স্বীকৃত নয়। ১৯৯৬ সালে সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি থেকে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে আসেন মকসুদ শাহীন। কিন্তু সেবারও তৃতীয় হন তিনি।
২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে চারদলীয় জোট থেকে ড. শফিকুর রহমান নিবার্চন করে জামানত হারান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে ধানের শীষে নির্বাচন করেন এনএম আবেদ রাজা। সেবারও ধানের শীষ তৃতীয় অবস্থান থেকে উন্নতি করতে পারেনি। ফলে এ আসনে কোনোদিন জয়ের মুখ দেখেনি ধানের শীষ। সর্বশেষ ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি বিএনপি।
স্থানীয় বিএনপির নেতারা বলছেন, সুলতান মনসুর ক্লিনইমেজের জাতীয় নেতা। অতীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও প্রতিপক্ষকে কোন সময়ের জন্য হয়রানি করেননি মনসুর। এলাকার স্বার্থে সবাইকে নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। তার কাছে কোনো কাজের জন্য এলাকার মানুষ গেলে দলীয় পরিচয় না খুঁজে তা করে দিয়েছেন। তাই এ আসনে একাদশ নির্বাচনে সুলতান মনসুর বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে মনে করেণ সেখানকার স্থানীয় বিএনপির নেতারা। কারণ এখানে সবার প্রিয় নেতা সুলতান মনসুর।
২০০৮ সালে মৌলভীবাজার-২ আসনে বিএনপির পরাজিত প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আবেদ রাজা বলেন। সুলতান মনসুরের পক্ষে সাধারণ মানুষের মাঝে যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে তাতে নিশ্চিত বুঝা যায় এইবার নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবেন মনসুর ভাই।
কুলাউড়ার রাউতগাও ইউপির চেয়াম্যান আব্দুল জলিল বলেন, সুলতান মনসুর এমপি থাকা অবস্থায় কুলাউড়ায় যে উন্নয়ন করেছেন তা কেউ কখনো করতে পারেননি। যার কারণে সাধারণ মানুষ সুলতানকেই ভোট দিয়ে জয়ী করবেন। এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমার সারাদিন কাটে, তাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি, তারা এখানে সুলতানকেই চান।
এ আসনে প্রায় ৫২ হাজার ভোট রয়েছে চা শ্রমিক এবং নৃগোষ্ঠীসহ সংখ্যালঘুদের। অতীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকা অবস্থায় সংখ্যালঘুদের ভোট বার বার নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন সুলতান মনসুর। যার বিশাল একটি অংশ এবার মনসুরকেই ভোট দেবেন।
কুলাউড়ার কাদিপুর ইউনিয়নের সৌরভ ভট্টাচার্য্য বলেন, আমার জীবনের প্রথম ভোট দিয়েছিলাম নৌকা মার্কায়। কিন্তু এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে এবার সুলতান মনসুরকে ভোট দেব। এখানে প্রতীক বড় বিষয় নয়; ব্যক্তি আমাদের কাছে সব থেকে বড়।
এক্যফ্রন্ট ছাড়া অন্যান্য দল এবং জোটে আছে সুলতান মনসুরের গ্রহণযোগ্যতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, এককথায় সুলতান মনসুর একজন ভালো মানুষ। ভালো মানুষ হিসেবে সুলতান মনসুরের গ্রহণযোগ্যতা সবার ওপরে। শুধু বিএনপির নয়; অন্যান্য দলেরও ভোট টানবেন সুলতান মনসুর।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভিপি মিজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, উনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে দলমত সবাই সম্মান করে। এলাকায় ওনার ইমেজ পরিষ্কার। এখানের মানুষ ভোট দেয় প্রার্থী দেখে, প্রতীক দেখে নয়। এবার ধানের শীষ নতুন ইতিহাস গড়বেন মনসুর সাহেবের মাধ্যমে।
এ বিষয়ে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ বলেন, আমি জনগণের ওপর আস্থাশীল। আমার বিশ্বাস, সব দলের লোক আমাকে ভোট দেবে। কারণ আমি কেমন মানুষ এ এলাকার প্রতিটি মানুষ তা জানে। এবার ধানের শীষ জয়ী হবে আমি বিশ্বাস করি।
নিউজ সুত্র: জাগোনিউজ২৪